ট্রান্সফর্মার একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস, যারা সাহায্য পাওয়ারকে 1 সার্কিট থেকে অন্য সার্কিটে পাওয়া ট্রানস্ফার করে | এটি ফ্রিকোয়েন্সি এবং পাওয়ার পরিবর্তন করেন | শুধুমাত্র ভোল্টেজ এবং কারেন্টের পরিবর্তন করে |
স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার দ্বারা ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয় এবং স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার দ্বারা ভোল্টেজ কমানো হয় |
যেখানে ভোল্টেজ বেশি প্রয়োজন সেখানে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয় | আর যেখানে কম ভোল্টেজের প্রয়োজন সেখানে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয় |
কোর
ট্রান্সফরমারের কোর সাধারণত আয়রন এবং সিলিকন স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয় |এই কোর এর উপর প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং স্থাপন করা হয় |কোর এর মাধ্যমে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং থাকে সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স স্থানান্তরিত হয় |
যখন প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এর ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়,তখন প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স উৎপন্ন হয় |এই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স অল্টারনেটিং হয়ে থাকে, অল্টারনেটিং ফ্লাক্স এর ফলে EMF উৎপন্ন হয় | যার ফলে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং কারেন্ট উৎপন্ন হয় | এই উৎপন্ন প্রাইমারি কারেন্ট সেকেন্ডারি তে প্রবাহিত হয় |
ট্রান্সফরমারে কোর এর মূল কাজ হলো ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সকে স্থানান্তরিত করতে সহায়তা করা | এই কোরকে পাতলা পাতলা অনেকগুলো শিট দ্বারা তৈরি করা হয় |যে পাতলা পাতলা শিট দ্বারা তৈরি করা হয় তার থিকনেস সাধারণত 0.5 mm হয়ে থাকে | এই শিটগুলো খুব ভালো ভাবেএকটি অন্যটির সাথে লেমিনেটেড করা থাকে |
এইভাবে অনেকগুলো পাতলা শিট দ্বারা তৈরি করা হয় যেন এডি কারেন্ট লস কম হয় |যদি পাতলা পাতলা শিট না করে একটিমাত্র খন্ড দ্বারা কোর তৈরি করা হয় তবে ট্রান্সফরমারের ওয়াইন্ডিং গুলো অনেক গরম হবে এর ফলে ট্রান্সফর্মার ও গরম হয়ে যাবে |
এইজন্য পাতলা পাতলা শিট দ্বারা তৈরি করা হয় যেন এডি কারেন্ট লস কম হয় ,এবং সিলিকন স্টিল ব্যবহার করা হয় হিসটেরেসিস লসকে কম করার জন্য |
ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং
ট্রান্সফরমারের ওয়াইন্ডিং সাধারণত কপার তারের হয়ে থাকে | এটি কোর এর উপর স্থাপন করা হয় | প্রত্যেকটি ওয়াইন্ডিং এ দুইটি অংশ থাকে, তা হল প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং |
প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং দুটি আলাদা আলাদাভাবে খুব ভালো করে ইনসুলেটিং করা থাকে | কোন ভাবেই যেন একটি অন্যটির সাথে সংস্পর্শে না আসে |
প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং: যে ওয়াইন্ডিং এর মাধ্যমে বাহির থেকে অল্টারনেটিং পাওয়ার প্রয়োগ করা হয় ট্রান্সফরমারে তাকে প্রাইমারি ওয়েন্ডিং বলে | প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং কখনো লোডের সাথে সংযুক্ত থাকে না, প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং সব সময় ট্রান্সফরমারের সরবরাহ প্রান্তের সাথে সংযুক্ত থাকে |
সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং: যে ওয়াইন্ডিং এর মাধ্যমে লোডে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া হয় তাকে সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং বলে |ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং সব সময় লোডের সাথে সংযুক্ত থাকে |
প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এ প্রয়োগ প্রকৃত পাওয়ার এর ফলে উৎপন্ন EMF এর ফলে সেকেন্ডারি তে ভোল্টেজ আবিষ্ট হয় | এটি প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এবং সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং এর রেশিও এর উপর নির্ভর করে |
এই ওয়াইন্ডিং গুলো স্থাপন করা হয় ট্রান্সফর্মার এর ধরন অনুসারে | স্টেপ আপ এবং স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারের উপর নির্ভর করে ওয়েল্ডিং গুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে স্থাপন করা হয় |
ট্রান্সফর্মার ট্যাংক
ট্রান্সফর্মার ট্যাংক সাধারণত মোটা মেটাল দ্বারা তৈরি করা হয় | এটি খুব মজবুর হয়ে থাকে, কারণ এটি ট্রান্সফর্মার কোর এবং ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং কে সুরক্ষা দিয়ে থাকে |
এই ট্যাংক এর মধ্যে ট্রান্সফর্মার কোর এবং কোর এর উপর স্থাপিত ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং স্থাপন করা হয় | যা সাথে ট্রান্সফর্মার অয়েল দেয়া হয় , যা ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে এবং ট্রান্সফর্মার কে ঠান্ডা রাখে |
বুশিং
বুশিং ট্রান্সফর্মার ট্যাংক এর উপস্থাপন করা হয় | যা ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং এর সাথে সংযুক্ত থাকে, বুশিং এর সাহায্যে ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং এ পাওয়ার সরবরাহ করা হয় এবং ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং থেকে পাওয়ার বুশিং এর সাহায্যে লোডে সরবরাহ করা হয় |
বুশিং পাওয়ার কে ট্রান্সফর্মার বডি থেকে আলাদা করে রাখে যা ইনসুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয় |সরবরাহ পাওয়ারের উপর নির্ভর করে বুশিং সাইজ নির্ধারণ করা হয় |
ট্রান্সফর্মার অয়েল
সাধারণত ট্রান্সফরমারের যে অয়েল ব্যবহার করা হয় তাকে মিনারেল অয়েল বলা হয় | তবে এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে |
বর্তমান সময়ে সাধারণত চার ধরনের ট্রান্সফর্মার অয়েল বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে |
Paraffinic Oil ( High Current ) : যে ধরনের ট্রান্সফরমারে হাই কারেন্ট এর জন্য তৈরি করা হয় সে ধরনের ট্রান্সফরমারে Paraffinic Oil ব্যবহার করা হয় |
Naphthenic Oil ( Low Current ): যে ধরনের ট্রান্সফরমারে লো কারেন্টের জন্য তৈরি করা হয় সে ধরনের ট্রান্সফরমারে Nephthenic Oil ব্যবহার করা হয় |
Bli Based Transformer Oil
Silicon-Based Transformer Oil
ট্রানসফর্মের অয়েল এর মূল কাজ হলো ইনসুলেশন তৈরি করা এবং ট্রান্সফর্মার কে ঠান্ডা রাখার জন্য ট্রানসফর্মের অয়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ |
কনজারভেটর ট্যাংক
কনজারভেটর ট্যাংক ট্রান্সফরমারের মূল ট্যাংকের উপরে স্থাপন করা হয় | কনজারভেটর ট্যাংক এবং ট্রান্সফরমারের মূল ট্যাংক পাইপের দ্বারা সংযুক্ত থাকে |
কনজারভেটর ট্যাংকের অর্ধেক অয়েল দ্বারা পূর্ণ থাকে | কখনোই কনজারভেটর ট্যাংককে অয়েল দ্বারা পূর্ণ করা হয় না |ট্রান্সফরমারের মূল ট্যাংক অয়েল দ্বারা সবসময় পূর্ণ থাকে |
ট্রান্সফর্মার রানিং থাকার ফলে ট্রান্সফর্মার ওয়াইন্ডিং গুলো হিট হয় | এই হিটের ফলে ট্রানসফর্মের অয়েল ও হিট হয়, যার ফলে ট্রান্সফর্মার অয়েল এর আয়তন বৃদ্ধি পায় | আয়তন বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত অয়েল কনজারভেটর যায় |
ট্রানসফর্মের অয়েল আবার যখন ঠান্ডা হয় তখন কনজারভেটর থেকে ট্রান্সফরমারের মূল ট্যাংকে অয়েল আবার ফিরে আসে |
ব্রিদার
ব্রিদার ব্যবহার করা হয় ট্রান্সফরমারের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য | কনজারভেটর ট্যাংক এবং ট্রান্সফরমারের মূল ট্যাংকে অয়েল যাতায়াতের সময় বাতাস ট্রান্সফর্মার থেকে বাহির করা এবং ট্রান্সফরমারে প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয় |
ট্রান্সফরমারের এই কাজ সম্পাদন করার জন্য ব্রিদার ব্যবহার করা হয় | ব্রিদার ব্যবহার করা না হলে ট্রান্সফর্মার অয়েল এর উচ্চচাপ এর ফলে ট্রান্সফর্মার ব্লাস্ট হতে পারে |
সিলিকা জেল
সিলিকা জেল এর কাজ হল বাতাস থেকে আদ্রতা শোষণ করে নেয়া | ব্রিদিং করার সময় ট্রান্সফর্মার বাহির থেকে যে বাতাস গ্রহণ করে তা পরিশোধিত করতে সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয় |
সিলিকা জেল ব্রিদার এর সাথে লাগানো থাকে | সিলিকা জেল দেখতে হালকা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে, কিছুদিন পর এগুলো হালকা বাদামী রঙের হলে পরিবর্তন করা উচিত | না হলে এর কর্মদক্ষতা হারিয়ে যায় |
রেডিয়েটর
রেডিয়েটর ট্রান্সফরমারের দুই পাশে লাগানো থাকে | যা সাধারণত ট্রান্সফর্মার অয়েলকে ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহার করা হয় |
ট্রান্সফর্মার অয়েল গরম হলে রেডিয়েটরে প্রবেশ করে, যা রেডিয়েটরের উপরের দিকে থাকে | রেডিয়েটরের মাধ্যমে অয়েল বাতাসের সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয় |
অয়েল যখন ঠান্ডা হয় তখন রেডিয়েটরের নিচের দিকে চলে আসে এবং ট্রান্সফরমারের ট্যাংকে ঠান্ডা অয়েল প্রবেশ করেন |
রেডিয়েটর এক্সট্রা কোন বাতাস সরবরাহ করা হয় না, এটি প্রাকৃতিক উপায় ট্রান্সফর্মার ঠান্ডা রাখার একটি ভালো ব্যবস্থা |
বুখোলজ রিলে
বুখোলজ রিলে মূলত একটি সেফটি ডিভাইস |Buchholz relay কনজারভেটর ট্যাংক এবং মূল ট্যাংক এর মধ্যে সংযোগ পাইপে স্থাপন করা হয় |
ট্রান্সফরমারের মাইনর সমস্যা হলে এটি এলার্ম এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান এর সংকেত প্রদান করে | আর ট্রান্সফরমারে মেজর সমস্যা হলে এটি সার্কিট ব্রেকার টিপ করার মাধ্যমে ট্রান্সফর্মার অফ করে দেয় |
Buchholz relay তে একটি গ্লাসের টুকরো ব্যবহার করা হয় | যা দ্বারা অয়েল প্রবাহ দেখা যায় | অনেক সময় ট্রান্সফর্মার এর সমস্যার কারণে গ্লাস টুকরোটি ভেঙে গিয়ে ট্রান্সফর্মার এর সুরক্ষা নিশ্চিত করে |
Explosion Valve
ব্রিদার দিয়ে বাতাস বের না হলে এবং খবুলাজ রিলে সেফটি না দিতে পারলে অল্টারনেটিভ হিসেবে Explosion Valve ব্যবহার করা হয় |
এটি একটি সেফটি ডিভাইস | ট্রান্সফর্মার কে বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা করে থাকে |এটি ট্রান্সফরমারের গুরুত্বপূর্ণ সেফটি ভাল্ব গুলো কাজ না করলে এই ভাল্বটি কাজ করে |
Q1. ট্রান্সফরমারের কয়েল গুলো কিভাবে সংযুক্ত থাকে ?
ANS: কয়েল গুলো একটি অভিন্ন আয়রন কোর দ্বারা চুম্বকীয় ভাবে সংযুক্ত থাকে |
Q2. ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং কাকে বলে ?
ANS: ট্রান্সফরমারের যে কয়েলে পাওয়ার সরবরাহ দেয়া হয় তাকে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং বলে |
Q3. ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং কাকে বলে?
ANS: ট্রান্সফরমারের যে কয়েলটি সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে সেকেন্ডারী ওয়াইন্ডিং বলে |
Q4. ট্রান্সফরমারের কয়েলের ভোল্টেজ এবং কারেন্টের পরিমাণ কিসের উপর নির্ভর করে ?
ANS: তারের প্যাচের সংখ্যা এবং সাইজের উপর নির্ভর করে |